বর্তমান বিশ্বে প্রায় সবজায়গাতেই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। হাতের স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, ডিজিটাল ক্যামেরা, ডেস্কটপ মনিটর, এ টি এম বুথ ইত্যাদি প্রায় সবজায়গাতেই আমরা এখন টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি দেখতে পাই।
এই পোস্ট টি ও হয়তো আপনি কোনো টাচস্ক্রিন ডিভাইসে ই পড়ছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা আসলে কাজ করে কীভাবে? কেনই বা কোনো টাচস্ক্রিন হাতে গ্লোভস পরা থাকা অবস্থাতেও কাজ করে, আর কোনোটা খালি হাতে ছাড়া কাজ করেনা। চলুন প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা যাক।
টাচস্ক্রিন এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, সব টাচস্ক্রিন ই একইভাবে কাজ করে, স্ক্রিনের কোন অংশে আপনি টাচ করেছেন সেটি খুঁজে বের করাই আসল কাজ। তবে, এই কাজটিই বিভিন্ন টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি বিভিন্নভাবে করে থাকে। আমরা এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইটা টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি, ১. রেজিস্টিভ এবং ২. ক্যাপাসিটিভ নিয়ে আলোচনা করব।
রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিনঃ
রেজিস্টিভ স্ক্রিন এ দুইটা লেয়ার থাকে। উপরের স্ক্রিন টা হয় নরম প্লাস্টিক এর তৈরি যার নিচের পাশে লম্বা অনুভূমিক লাইনের মত করে একটা বিদ্যুৎবাহী পদার্থের আবরন থাকে। এটার নিচের লেয়ারটাতেও একই পদার্থের আবরণ দেওয়া থাকে, তবে সেটার লাইনগুলো থাকে উল্লম্বভাবে। যখন স্ক্রিনে টাচ করা হয়, তখন আঙুলের চাপে দুইটা লেয়ার একে অপরকে স্পর্শ করে এবং উপরের লেয়ারের কিছু সংখ্যক অনুভূমিক লাইন নিচের লেয়ারের কিছু সংখ্যক উল্লম্ব লাইনকে স্পর্শ করে। যার ফলে, লাইনগুলোর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তন ঘটে। ডিভাইসের মধ্যে থাকা একটা মাইক্রোচিপ তখন হিসাব করে বের করে যে কোথায় টাচ করা হয়েছে। এই ধরণের টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আপনি কি দিয়ে স্ক্রিনে টাচ করছেন সেটা কোনো বিষয় না। শুধু হালকা চাপ দিলেই কাজ হবে। তাই, হাতে গ্লোভস পরা থাকা অবস্থাতেও এই ধরণের স্ক্রিনগুলো কাজ করে।
ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনঃ
এই ধরণের স্ক্রিনগুলোতেও রেজিস্টিভ স্ক্রিনের মত দুইটা লেয়ার থাকে এবং সেগুলোতে অনুভূমিক এবং উল্লম্ব বরাবর বিদ্যুৎবাহী পদার্থের আবরণ থাকে। কিন্তু, এটার স্ক্রিন হয় শক্ত কাঁচের তৈরি। দুইটা লেয়ারে আলাদাভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন হয় যাদের মাঝে হালকা ফাঁকা জায়গা থাকে। অর্থাৎ, এটা একটা ক্যাপাসিটর এর মত কাজ করে। মানুষের শরীরেও কিছু পরিমাণ ইলেকট্রিক চার্জ থাকে, যার কারনে যখন আমরা স্ক্রিনে টাচ করি তখন স্ক্রিনের ঐ অংশের ভোল্টেজ এর পরিবর্তন ঘটে। স্ক্রিনের মাইক্রোচিপ তখন ভোল্টেজের পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে বুঝতে পারে যে কোথায় টাচ করা হয়েছে। ঠিক এই কারণেই এই ধরণের স্ক্রিনগুলো ব্যবহার করার জন্য হাতের স্পর্শের প্রয়োজন হয়। অথবা, কোনো বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ দিয়ে স্পর্শ করলেও কাজ হয় যাতে হাত থেকে ইলেকট্রিক চার্জ গুলো স্ক্রিনে পৌঁছাতে পারে।
কেন ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন?
এখন মনে অন্য একটা প্রশ্ন আসতে পারে। রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিন যেহেতু যেকোনো জিনিস দিয়ে টাচ করলেই কাজ করে, তাহলে আর ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনের কি দরকার? রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিন ই তো ভাল।
প্রশ্নটার অনেকগুলো উত্তর আছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নির্ভুলতা। ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন যেহেতু ভোল্টেজ এর পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে টাচ এর পজিশন খুঁজে বের করে, তাই একসাথে অনেকগুলো আঙুল দিয়েও টাচ করা হলেও এটি সঠিকভাবে টাচ এর পজিশন বুঝতে পারে। রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিন এটা পারেনা।
তাই মাল্টিটাচ এর ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন এর উপরেই ভরসা করতে হয়। স্মার্টফোনগুলোতেও তাই ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
যদিও বর্তমান সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইটি টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি হল রেজিস্টিভ আর ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন, এগুলো ছাড়াও আরো কিছু টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন, ইনফ্রারেড গ্রিড, অপটিক্যাল ইমেজিং ইত্যাদি।